সমাস কাকে বলে? সমাস কত প্রকার ও কি কি?

সমাস হচ্ছে দুই বা ততোধিক পদের একপদীকরণ। যে কোন ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয় সন্ধি, প্রত্যয় ও সমাসের মাধ্যমে। ব্যাকরণে এই তিনটি বিষয় নতুন নতুন শব্দ নির্মাণের সাহায্য করে।

সমাস শব্দটির অভিধানিক অর্থ ‘সংক্ষেপ’ বা ‘মিলন’। ব্যাকরণে ‘সমাস’ শব্দটির অর্থ একাধিক পদের এক পদীকরণ। ‘ সমাস’ শব্দটির প্রকৃত প্রত্যয় হল – সম্ – √অস+অ (ঘঙ)। ‘ সম্ ‘ হল উপসর্গ,’ অস ‘ হল ধাতু এবং ‘ অ ‘ হল প্রত্যয়।

আরো পড়ুন: বল কাকে বলে? বলের প্রকারভেদ। মৌলিক বল কি?

যেমনঃ সু (শোভন) ব্রত যাহার = সুব্রত।

অর্থবাচকতা

সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, সমর্থন, সংগ্রহ, মিলন।

সমাস প্রকারভেদ

সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ

  • দ্বন্দ্ব
  • বহুব্রীহি
  • কর্মধারয়
  • তৎপুরুষ
  • দ্বিগু
  • অব্যয়ীভাব

দ্বন্দ্ব সমাস

যে সমাসে সমস্যমান প্রত্যেক পদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।

যেমনঃ রূপ ও রস ও গন্ধ ও শব্দ ও স্পর্শ = রূপরসগন্ধশব্দস্পর্শ; অন্ন ও বস্ত্র = অন্নবস্ত্র।

বহুব্রীহি সমাস

যে সমাসে মূখ্যভাবে সমস্যবান পদসমূহের অর্থপ্রতীতি না হয়ে অন্য পদের অর্থ মূখ্যরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

যথাঃ পীত হইয়াছে অম্বর যাহার = পীতাম্বর (অর্থ শ্রীকৃষ্ণ)। এর ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের প্রয়োগ থাকে।

কর্মধারয় সমাস

বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে।

যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে।

কর্মধারয় সমাস প্রধানতঃ চার প্রকার। যথাঃ-  
  • মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
  • উপমিত কর্মধারয় সমাস
  • রূপক কর্মধারয় সমাস
  • উপমান কর্মধারয় সমাস

মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসঃ কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে।

যথাঃ হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।

উপমিত কর্মধারয় সমাসঃ সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।

যেমনঃ মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।

রূপক কর্মধারয় সমাসঃ উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে।

যেমনঃ বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।

উপমান কর্মধারয় সমাসঃ উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।

যেমনঃ শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।

তৎপুরুষ সমাস

দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রধানভাবে থাকে।

যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত।

তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ- 

  • দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ
  • তৃতীয়া-তৎপুরুষ
  • চতুর্থী-তৎপুরুষ
  • পঞ্চমী-তৎপুরুষ
  • ষষ্ঠী-তৎপুরুষ
  • সপ্তমী-তৎপুরুষ

দ্বিতীয়া-তৎপুরুষঃ দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে।

যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।

তৃতীয়া-তৎপুরুষঃ তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে।

যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।

চতুর্থী-তৎপুরুষঃ চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে।

যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।

পঞ্চমী-তৎপুরুষঃ পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে।

যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।

ষষ্ঠী-তৎপুরুষঃ ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে।

যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।

সপ্তমী-তৎপুরুষঃ সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে।

যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা।

এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে।

যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।

দ্বিগু সমাস

তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।

তদ্ধিতার্থে, যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু। উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। [এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে]। সমাহারে, যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোকী।

অব্যয়ীভাব সমাস

অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।

About the Author

অপ্রাপ্তি

অপ্রাপ্তি হলো একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট যেখানে প্রতিনিয়ত টেকনোলজি এবং প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন টিপস এবং ট্রিকস নিয়ে আর্টিকাল প্রকাশ করা হয়।

Leave a Comment